
আইটি পেশাজীবি এবং ফ্রিল্যান্সারদের কাছে পেশা হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইনের কদর বেড়েই চলেছে দিনকে দিন। একদিকে যেমন আছে নিজের সৃজনশীলতা দেখানোর সুযোগ, সেইসাথে নিজের মতো কাজ করে অর্থ আয়ও করা যায় গ্রাফিক ডিজাইনিং থেকে। কিছু অনলাইন সাইটও রয়েছে যেখানে আপনি ঘরে বসেই গ্রাফিক ডিজাইনের দক্ষতা দেখিয়ে ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন নিয়মিত। এরকম কিছু সাইট নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
১. ক্রিয়েটিভ মার্কেট (Creative Market)
নিজের তৈরী করা ওয়েব ডিজাইন, লোগো এবং টেমপ্লেটস বিক্রি করার জন্য অন্যতম সেরা একটি ওয়েবসাইট হলো ক্রিয়েটিভ মার্কেট। এখানে গ্রাফিক ডিজাইনাররা নিজেরাই শপ ক্রিয়েট করে নিজেদের নির্ধারিত মূল্যে ডিজাইন বিক্রি করতে পারেন, আবার প্রয়োজন মনে করলে সময়ে সময়ে দাম বাড়ানো কমানোতেও নেই কোন বাধা। কোনো ডিজাইন আপলোড করামাত্রই তা নিজে থেকেই লাইভে চলে যায়। আরো অভিনব ব্যপার হলো একই ডিজাইন যদি আপনি অন্য কোনো ওয়েবসাইটেও বিক্রি করতে চান তার জন্য কোন জরিমানা দিতে হয়না।
ক্রিয়েটিভ মার্কেটে শপ ওনার বা ডিজাইনার কোনো ডিজাইনের বিক্রয় মূল্যের ৭০% পেয়ে থাকে। পেপাল বা ব্যাংক ডিপোজিটের মাধ্যমে ডিজাইনারদের কাছে মূল্য পরিশোধ করা হয়।

ওয়াবসাইটগুলোতে আদর্শ মান বজায়ে রাখতে দেওয়া হয় দারূণ সব টেমপ্লেট, ছবিসূত্রঃ /inkdrestack-production.s3.amazonaws.com
২. ফোরটিএইট আওয়ার্স লোগো (48hours logo)
লোগো কেনাবেচার এক বিশাল মার্কেটপ্লেস হলো ফোরটিএইট আওয়ার্স লোগো। তুলনামূলক নতুন ডিজাইনারদের জন্য এই সাইটটি অনুপযুক্ত। ডিজাইনিংয়ে ভালো পোর্টফোলিও যাদের আছে, তাদের জন্য এই সাইটটি সুবিধাজনক বেশি। এখানে কোনো ক্লায়েন্টের লোগো ডিজাইন করানোর প্রয়োজন হলে প্রতিযোগীতার ডাক দেন। ক্লায়েন্টের নির্দেশনা অনুসরণ করে আগ্রহী ডিজাইনাররা লোগো ডিজাইন করে জমা দেন। সাধারণত সময়সীমা থাকে ৪৮ ঘন্টার। সেখানথেকে ক্লায়েন্ট পছন্দসই লোগো বেছে নেন।
এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টই দাম হাঁকেন লোগোর জন্য। সাধারণত একেকটি লোগোর জন্য ৯৯ থকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত দাম ধরা হয়। পেপাল ও স্ট্রাইপের মাধ্যমে কোম্পানী ডিজাইনারদের অর্থ পরিশোধ করে থাকে।

৩. ইঙ্কড (InkD)
প্রিন্ট করা যায় এমন ডিজাইনিং কাজ যেমন প্যাম্ফলেট, কার্ড , মেনু ইত্যাদি বেচাকেনার মার্কেটপ্লেস হচ্ছে ইঙ্কড।একাউন্ট খোলার পর একজন ডিজাইনারকে এখানে স্টোরফ্রন্ট তোরী করতে হয় নিজের ডিজাইন করা টেমপ্লেটগুলো প্রদর্শনের জন্য। তবে এক্ষেত্রে কিছু ধাপ রয়েছে। প্রথমে কোন ধরনের ডিজাইন করতে চাচ্ছেন তা বাছাই করতে হয়। যেমন- কার্ড বাছাই করলে কার্ডের একটি টেমপ্লেট নামিয়ে তার উপর ডিজাইন করতে হবে। এটা আদর্শ মান ধরে রাখার জন্য করা হয়। ডিজাইন শেষে আপলোড করার পর কিছু রিভিউয়ার থাকেন যারা মান যাচাই করে ডিজাইনটি বিক্রয় করার অনুমতি দিয়ে আপলোড করে দেন।
প্রতিটি ডিজাইন বিক্রির জন্য ডিজাইনাররা এখানে ২০% করে কমিশন পেয়ে থাকেন। পেপাল ও ব্যাংকচেকের মাধ্যমে ডিজাইনাররা কমিশন পান।
৪. নাইন্টি নাইন ডিজাইনস ( 99Designs)
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আরেকটি সেরা ওয়েবসাইট হলো নাইন্টি নাইন ডিজাইন্স। এখানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করার জন্য প্রথমেই একটি পাবলিক প্রোফাইল খুলতে হবে। এরপর নিজের পছন্দসই প্রতিযোগিতা খুঁজে সেখানে নিজের ডিজাইন সাবমিট করা যাবে। এভাবেই ডিজাইন সাবমিট করে এবং ক্লায়েন্টদের সাথে সংযোগ তৈরী করে এখানে নিজের পোর্টফোলিও বনাতে হয় ও কাস্টমার সংখ্যা বাড়াতে হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে মাত্র শুরু করেছেন এমন ডিজাইনাররা এখানে মাসে কেবল ১০টি প্রতিযোগীতায় এন্ট্রি করতে পারবেন।
নাইনটি নাইন ডিজাইনস তাদের ডিজাইনারদের পাইওনিয়ার কিংবা পেপালে মূল্য পরিশোধ করে। প্রতিটি প্রতিযোগীতা জেতার পর ডিজাইনারের একাউন্টে টাকা যোগ হয়।

৫. অসাম ওয়েব (Awesome Web)
একইসাথে ওয়েব ডিজাইনার ও গ্রাফিক ডিজাইনার ফ্রিল্যান্সারদের কাজের জায়গা হলো অসাম ওয়েব। অসাম ওয়েবের অতুলনীয় ব্যপার হলো এখানে নতুন কাজ শুরু করা ডিজাইনারদের বড় হওয়ার ও পোর্টফোলিও বানানোর সুযোগ দেওয়া হয়। প্রথমেই একাউন্ট খুলে তারপর নিজের স্কিল বাছাই করতে হয় এরপর নিজের গ্রাইক ডিজাইনগুলো আপলোড করতে হয়। প্রোফাইল পাব্লিওক হলে ক্লায়েন্ট সরাসরি ডিজাইনারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে প্রতিটি প্রোফাইলেরই মান বজায় রাখতে রিভিউ করা হয় পাব্লিক করার আগে।
অসাম ওয়েব ডিজাইনারদের থেকে তাদের বিক্রিত ডিজাইনের জন্য কোন কমিশন বা পার্সেন্টেজ রাখেনা। তবে প্রতিমাসে প্রোফাইল রাখার জন্য ২৭ ডলার করে গুণতে হয়। আবার সেইমাসে যদি ডিজাইনার কোন ক্লায়েন্ট না পেয়ে থাকেন তখন কোম্পানী অই ২৭ ডলার ফেরত দিয়ে দেয়। ডিজাইনের মূল্য ডিজাইনার ও ক্লায়েন্টের দরকষাকষিতেই নির্ধারিত হয়। পরিশোধের সুবিধাজনক মাধ্যমও আলাপচারিতার মাধ্যমেই ঠিক করা হয়।
ফিচার ছবি- wizardz.co.za