অনলাইন ব্যবসা বা ই-কমার্স বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ক্ষেত্র, ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই জন্য। কেউ ঘরে বসেই উপার্জন করছেন আর কেউ ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরণের পণ্য পেয়ে যাচ্ছেন হাতের নাগালে। ছোট্ট চাবির রিং থেকে শুরু করে ফ্ল্যাটের চাবি সবই আজকাল পাওয়া যায় অনলাইন শপে।

এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতাও বেড়ে চলেছে জনপ্রিয়তার সাথে তাল মিলিয়ে। তাই নতুন শুরু করা অনলাইন ব্যবসায় সফলভাবে বিক্রয় করা বা গ্রাহক সেবা দেওয়া বেশ শ্রমসাধ্য কাজ বর্তমানে। এই ৮ টি সহজ নির্দেশনা আপনার অনলাইন ব্যবসাকে পাইয়ে দিতে পারে ব্র্যান্ড ভ্যালু।
১. নিজস্ব ই-কমার্স কৌশল তৈরী করুন
আপনি কি বিক্রি করছেন, কতটা, কেমন দামে তার উপর নির্ভর করে নিজস্ব ই-কমার্স কৌশল পরিকল্পনা করুন। শুধু কি অনলাইনেই বিক্রি করবেন নাকি দোকানেও, অর্ডারের পণ্য কিভাবে ক্রেতার কাছে পৌঁছাবেন, কত সময়ে তাও এই পরিকল্পনার অংশ। কেবল একটি বিশেষ পণ্যই বিক্রি করবেন নাকি একাধিক রেঞ্জের তাও আপনাকে ভাবতে হবে। কতদিন পর পর কি পণ্য স্টক এ রাখবেন তাও আপনার ই-কমার্সের কৌশলের অন্তর্ভুক্ত।
২. কেবল মোবাইল নির্ভর চিন্তা বাদ দিন
গ্রাহক বা ক্রেতা যে কেবল মোবাইল ফোনেই পণ্য অর্ডার করছেন এমন নয়। আবার মোবাইলে অর্ডার করলেও পণ্যটি যে গাড়ি, ফ্ল্যাট বা জমির মত বড় কিছু হতে পারবেনা এমন নয়। তাই নিজের বিপণনের ধারণাকে প্রসারিত করুন। পণ্য এমনভাবে উপস্থাপন করুন যেন তা সব ডিভাইস উপযোগী হয় সেইসাথে যেকোন পণ্য অনলাইনে বিক্রি করার সক্ষমতাও অর্জন করুন।
৩. ই-কমার্সের সঠিক সফটওয়্যারটি বেছে নিন

কেবল অনলাইনে বিক্রয়ের জন্য একটি পেইজ বা ওয়েবসাইট খোলাই শেষ কথা নয়। কোন সফটওয়্যারটির মাধ্যমে বিল পরিশোধিত হবে, ওয়েবসাইট চালানো হবে তাও ঠিক করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই শপিফাই বা বিগকমার্সের মত মৌলিক অনলাইন শপ টেমপ্লেটের উপর নির্ভর করেন। এই শক্তিশালী ই-কমার্স সফটওয়্যারগুলো আপনার কাজকে আরো সহজ করে দেবে যাতে আপনি পণ্যের বিপণনে মনযোগ দিতে পারেন বেশি।
৪. উন্নত অনলাইন সেবা নিশ্চিত করুন
যেকোনো সফল ব্যবসার মূল কথাই হল গ্রাহকের সন্তুষ্টি। অনলাইন ব্যবসাও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিযোগীতা বেশি বলে এক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতন থাকতে হয় যেন গ্রাহক অসন্তুষ্ট হয়ে অন্য বিক্রেতার প্রতি না ঝুঁকেন। উন্নত অনলাইন সেবা মানে কেবল এই না যে গ্রাহকের সাথে কথা বলায় বিনয়ী হতে হবে। পণ্য বাছাই, ওয়েবসাইট সাজানো, ডেলিভারি, সবকিছুতে গ্রাহকের চাহিদা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেই ভালো অনলাইন সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।

৫. প্রথম ও পরের সব বিকিকিনিকেই সমানভাবে উত্সাহিত করুন
বিক্রেতার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বেশি বেশি নতুন ক্রেতা লাভ। সেইসাথে নিয়মিত ক্রেতা বাড়ানো। ক্রেতার প্রথম ক্রয়ের অভিজ্ঞতা যেন ভালো হয় তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। কিন্তু অনেক অনলাইন ব্যবসায়ীই প্রথম ক্রয়ের অভিজ্ঞতাকে যতটা গুরুত্ব দেন দ্বিতীয়টিকে আর ততটা দেন না। এর ফলে প্রায়ই অনলাইনে ক্রেতা স্থায়ী বা নিয়মিত হয় কম। সফল অনলাইন ব্যবসায়ীকে অবশ্যই গ্রাহকের প্রতিটি ক্রয়ের অভিজ্ঞতাকে সমান ভালো করার চেষ্টা করতে হবে।
৬. ভালো ডেলিভারি অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা
ডেলিভারি সেবার মধ্যে পণ্যের দাম, প্যাকেজিং, কিভাবে, কত সময়ে তা ক্রেতার কাছে পৌঁছুলো এর সবই অন্তর্ভুক্ত। ডেলিভারির অভিজ্ঞতাকে ভালো করার জন্যও আলাদা কৌশল অবলম্বণ করতে হবে। ভালো ডেলিভারি পাওয়ার অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে ক্রেতা আবার কিছু কিনবেন কিনা। তাই গ্রাহকদের ডেলিভারি সঠিকভাবে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের কৌশলগতভাবে বিনিয়োগ করতে হবে।

৭. বিশ্বাসযোগ্য অনলাইন ব্র্যান্ড হিসেবে আস্থা অর্জন করুন
আজকাল অনলাইন ক্রেতারাও দারুণ খুঁতখুঁতে হয় গেছেন। যেকোনো ভূঁইফোর অনলাইন শপ থেকেই কিছু অর্ডার করেন না। বিশ্বাসযোগ্য, ভালো অনলাইন শপের খোঁজই করেন সবাই। আর কোন অনলাইন শপটি কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা যাচাই করেন কাস্টমার রিভিউ, কতজন ক্রেতা, সেইসব দেখে। তাই অনলাইনে বিক্রয়ের সময় ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগে, পণ্য সঠিক সময়ে সঠিকভাবে ডেলিভারিতে এই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সেইসাথে কাস্টমারদের বেশি বেশি রিভিউ দিতেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৮. অনলাইন শপিং-এর অভিজ্ঞতাকে ভালো করতে থাকুন
যেহেতু আপনি কেবল একবারই অনলাইনে বিক্রি করবেন না তাই নিয়মিত সেবার মানকে ভালো করার উপর গুরুত্ব দিন। কোন একটি ক্ষেত্রে অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে আগে কাজ করুন। তারপর দেখুন পরবর্তী কোন বিষয়টিকে আরও মানসম্পন্ন করা যায়। অনলাইন ব্যবসার তুমুল প্রতিযোগীতার দিকটি মাথায় রেখেই প্রতিনিয়ত নিজেদের পণ্যের মান ও সেবাকে আরো ভালো করার চেষ্টা করে যেতে হবে।